এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা -
• কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;
• নেটওয়ার্ক-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রপাতির কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে অনেক বেশি সিগনাল পাঠানো সম্ভব। একটি অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে একসাথে কয়েক লক্ষ টেলিফোন কল পাঠানো সম্ভব।
স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ মহাকাশে থেকে পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরতে থাকে । এই স্যাটেলাইটের সাহায্যে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে রেডিও, টেলিফোন, মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে সিগনাল পাঠানো হয় ।
দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম দিয়ে একসাথে জুড়ে দিলে যদি তারা নিজেদের ভেতর তথ্য কিংবা উপাত্ত আদান-প্রদান করতে পারে- তাহলেই আমরা সেটাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে পারি। বুঝতেই পারছ সত্যিকারের নেটওয়ার্কে আসলে দু-তিনটি কম্পিউটার থাকে না। সাধারণত অনেক কম্পিউটার থাকে। আজকাল এমন হয়ে গেছে যে, কেউ একটা কম্পিউটার কিনলে যতক্ষণ না সেটাকে একটা নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দিতে পারে, ততক্ষণ তার মনে হতে থাকে কম্পিউটার ব্যবহারের আসল কাজটিই বুঝি করা হলো না। তার কারণ হচ্ছে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে যখন তথ্য দেওয়া নেওয়া হয়, তখন একটা অনেক বড় কাজ হয়। একজন ব্যবহারকারী তখন নেটওয়ার্কের অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারে। যে রিসোর্স তার কাছে নেই, সেটিও সে নেটওয়ার্ক থেকে ব্যবহার করতে পারে।
নেটওয়ার্কের পুরোপুরি ধারণা পেতে হলে নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক আছে এরকম কিছু যন্ত্রপাতির কথা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
সার্ভার : সার্ভার নাম শুনেই বুঝতে পারছ এটা serve করে। অর্থাৎ সার্ভার হচ্ছে শক্তিশালী কম্পিউটার যেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারকে নানা রকম সেবা দিয়ে থাকে। একটি নেটওয়ার্কে কিন্তু একটি নয় অনেকগুলো সার্ভার থাকতে পারে।
কারেন্ট : কেউ যদি অন্য কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সেবা নেয়, তখন তাকে ক্লায়েন্ট বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ক্লায়েন্ট শব্দটির অর্থ মোটামুটি সেরকম। যে সব কম্পিউটার সার্ভার থেকে কোনো ধরনের তথ্য নেয় তাকে ক্লায়েন্ট বলে। যেমন মনে কর, তুমি তোমার কম্পিউটার থেকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই-মেইল পাঠাতে চাও। তাহলে তোমার কম্পিউটার হবে ক্লায়েন্ট। নেটওয়ার্কের যে কম্পিউটারটি “ইমেইল পাঠানোর কাজটুকু তোমার জন্য করে দেবে সেটা হবে সার্ভার”- এ ক্ষেত্রে এ সার্ভারটি হল ইমেইল সার্ভার।
মিডিয়া : যে বস্তু ব্যবহার করে কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেওয়া হয় সেটা হচ্ছে মিডিয়া। বৈদ্যুতিক তার, কো-এক্সিয়াল তার, অপটিক্যাল ফাইবার ইত্যাদি মিডিয়া হতে পারে। কোনো মিডিয়া ব্যবহার না করেও তার বিহীন (যেমন- Wi-Fi) পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে জুড়ে দেওয়া যায়।
নেটওয়ার্ক এডাপ্টার : একটি কম্পিউটারকে সোজাসুজি নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দেয়া যায় না। সেটি করার জন্য কম্পিউটারের সাথে একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC) লাগাতে হয়। সেই কার্ডগুলো তখন মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটারকে দিতে পারে। আবার কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে সেটি নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিতে পারে।
রিসোর্স : ক্লায়েন্টের কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তার সবই হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটারের সাথে যদি একটি প্রিন্টার কিংবা একটি ফ্যাক্স মেশিন লাগানো হয় সেটি হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটার দিয়ে কেউ যদি সার্ভারে রাখা একটি ছবি আকার সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটিও রিসোর্স। যারা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা শুধু যে রিসোর্স গ্রহণ করে তা নয়, তোমার কাছে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে বা মজার ছবি থাকে এবং সেটি যদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যরাও ব্যবহার করতে থাকে তাহলে তোমার কম্পিউটারও একটি রিসোর্স হয়ে যাবে।
ইউজার : সার্ভার থেকে যে ক্লায়েন্ট রিসোর্স ব্যবহার করে, সে-ই ইউজার (user) বা ব্যবহারকারী।
প্রটোকল : ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে হলে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের যোগাযোগ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম মেনেই তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। যারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা আগে থেকেই ঠিক করে নেয়, কোন ভাষায়, কোন নিয়ম মেনে এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করবে। এই নিয়মগুলোই হচ্ছে প্রটোকল। যেমন- ইন্টারনেটে ওয়েব পেজ ব্রাউজ করার জন্য প্রটোকল হলো hypertext transfer protocol (http)।
গলগত কাজ : তোমাদের স্কুলের কম্পিউটারগুলোকে নেটওয়ার্কিং-এর আওতায় আনার জন্যে কী কী রিসোর্সের প্রয়োজন! একটি তালিকা তৈরি কর।
মজুন শিখলাম : সার্ভার, ক্লারেন্ট, মিডিয়া, মেটওয়ার্ক এডস্টার, রিসোর্স, ইউজার, প্রটোকল, HTTP ।
মানুষ সামাজিক জীব। আদিকাল থেকে মানুষ নানা ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একসঙ্গে সামাজিকভাবে থাকতে লিখেছে। সমাজের সবার কিছু দায়িত্ব থাকে এবং সবাই মিলে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে শিখে।
সভ্যতার বিকাশের পর সামাজিকভাবে একসঙ্গে থাকার বিষয়টিও নতুন যাত্রা পেয়েছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতে যে নেটওয়ার্কের জন্ম হয়েছে, সেটিও আমাদের জীবনে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমরা অতীতে যে কাজগুলো করতাম, আজকাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেই একই কাজ অন্যভাবে করতে শিখেছি। নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় ব্যবহার হচ্ছে তথ্যকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা। আগে একটি তথ্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া অস ও কঠিন একটি কাজ ছিল। এখন মুহূর্তের মধ্যে একটি তথ্য শুধু যে নিজের পরিচিতদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি তা নয়, সেটি সারা দেশে, এমনকি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারি। শুধু তাই নয়, একসময় তথ্য ছিল সম্পদের মতো। যার কাছে তথ্য যত বেশি, সে তত ক্ষমতাশালী। নেটওয়ার্কের কারণে এ ধারণাটা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এখন তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত। বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিশেষ তথ্যকে নিজের জন্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে কিন্তু অন্যান্য সাধারণ তথ্য এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। একজন খুব সাধারণ মানুষ আর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ দুজনেরই পৃথিবীর তথ্যভাণ্ডারে সমান অধিকার। দুজনেই একই তথ্যভান্ডার থেকে একই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।নেটওয়ার্ক দিয়ে তথ্যকে উপস্থাপন করার কারণে সারা পৃথিবীতেই নতুন একধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।
একসময় যে তথ্যগুলো কাগজে সংরক্ষণ করতে হতো, এখন সেটি ডেটাবেসে সংরক্ষণ করা হয়। আগে সেই তথ্যগুলো কাগজ খেটে মানুষকে খুঁজে বের করতে হতো; কাজটি ছিল নিরানন্দময় এবং সময় সাপেক্ষ। এখন কম্পিউটারে আঙুলের টোকায় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যে কেউ ডেটাবেসে তথ্য রাখতে পারে, প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। একসময় যে কাজটি করার জন্যে অনেক ধরনের কাগজপত্রে অনেক ধরনের তথ্য রাখার প্রয়োজন হতো, এখন সেটি কোনো শক্তিশानী কম্পিউটারের ডেটাবেসে রাখা হয়। কাগজপত্রের ব্যবহার দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে বিমানের টিকেট।এক সময় বিমানের যাত্রীদের টিকিট হাতে নিয়ে বিমানবন্দরে যেতে হতো। এখন সারা পৃথিবীতে ই-টিকিটের প্রচলন হয়েছে এবং বিমানের কোনো যাত্রীকে আর বিমানের টিকিট হাতে করে নিতে হয় না। বিমানের কর্মকর্তারা যাত্রীর পরিচর থেকে সরাসরি তার টিকিটের তথ্য পেয়ে যান এবং যাত্রীদের বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেন। সেই দিনটি আর বেশি দূরে নয়, যখন কাউকে আর নিজের পাসপোর্টটি সাথে নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে না। যখন প্রয়োজন হবে, তখন তার আঙুলের ছাপ কিংবা চোখের রেটিনা স্ক্যান করে ডেটাবেস থেকে তার সকল তথ্য বের করে নিয়ে আসা হবে।
নেটওয়ার্কের অন্য ব্যবহারটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ। একসময় সকল প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার প্রত্যেকটি কম্পিউটারেই আলাদাভাবে রাখার প্রয়োজন হতো। এখন আর সেটি রাখতে হয় না। একটি মূল কম্পিউটার বা সার্ভারে সফটওয়্যার রাখা হয় এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য সব কম্পিউটার সার্ভারে রাখা সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে একজন মানুষ কোনো মূল্যবান সফটওয়্যার না কিনেই বিনামূল্যে বা অত্যন্ত কম মূল্যে সেটি ব্যবহার করতে পারে। শুধু যে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে তা নয়, একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত সবকিছুই নিজের কম্পিউটারে না রেখে অন্য কোথাও রেখে দিতে পারে। যেকোনো সময় পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে সেটি ব্যবহার করতে পারে, সেরকম ব্যবস্থাও রয়েছে। এরকম একটি জনপ্রিয় সেবার নাম ড্রপবক্স (Dropbox ) এবং এই বইটি লেখার সময়েও যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণে ড্রপবক্স ব্যবহার করা হয়েছে।
দলগত কাজ : এখানে উল্লেখ নেই এমন নেটওয়ার্কের পাঁচটি ব্যবহার লেখ।
নতুন শিখলাম : ই-টিকেট, রেটিনা স্ক্যান, ড্রপবক্স।
তোমরা সবাই জেনে গেছ, কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অনেকগুলো কম্পিউটার একসাথে জুড়ে দেওয়া হয়, যেন একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। জুড়ে দেওয়া কম্পিউটারগুলোর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়:
> PAN (Personal Area Network)
> LAN (Local Area Network)
> MAN (Metropolitan Area Network)
> WAN (Wide Area Network)
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে নেটওয়ার্ক (ব্লু-টুথ এর মাধ্যমে) তৈরি করা হয় তা হলো PAN। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়, এগুলো সবই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN । সচরাচর একটি শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তা হলো MAN। দেশ জুড়ে বা পৃথিবী জুড়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তা হলো WAN । এই নেটওয়ার্কের অন্তর্গত কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টপোলজি।
বাস টপোলজি : এই টপোলজিতে একটা মূল ব্যাকবোন বা মূল লাইনের সাথে সবগুলো কম্পিউটারকে জুড়ে দেওয়া হয়। বাস টপোলজিতে কোনো একটা কম্পিউটার যদি অন্য কোনো কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে সব কম্পিউটারের কাছেই সেই তথ্য পৌঁছে যায়। তবে যার সাথে যোগাযোগ করার কথা কেবল সেই কম্পিউটারটি তথ্যটা গ্রহণ করে। অন্য সব কম্পিউটার তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করে। মনে রাখতে হবে মূল বাস/ব্যাকবোন নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যায়।
রিং টপোলজি : নাম শুনেই বুঝতে পারছ, রিং টপোলজি হবে গোলাকার বৃত্তের মতো। ছবি দেখতে পারছ, এই টপোলজিতে প্রত্যেকটা কম্পিউটার অন্য দুটো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত। এই টপোলজিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য যায় একটা নির্দিষ্ট দিকে।
তবে মনে রেখো, রিং টপোলজিতে কম্পিউটারগুলোকে কিন্তু বৃত্তাকারে থাকার দরকার নেই, সেগুলো এলোমেলোভাবে থাকতে পারে। কিন্তু যদি সব সময়েই কম্পিউটারগুলোর মাঝে বৃত্তাকার যোগাযোগ থাকে, তাহলেই সেটি রিং টপোলজি। উল্লেখ্য এক্ষেত্রে কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাবে।
স্টার টপোলজি : কোনো নেটওয়ার্কের সবগুলো কম্পিউটার যদি একটি কেন্দ্রীয় হাব (Hub)/সুইচ (Switch)-এর সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে নেটিকে বলে স্টার টপোলজি। এটি ভুলনামূলকভাবে একটি সহজ টপোলজি এবং অনুমান করা যায়, কেউ যদি খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়, তাহলে সে স্টার টপোলজি ব্যবহার করবে। এই টপোলজিতে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলেও বাকি নেটওয়ার্ক সচল থাকে। কিন্তু কোনোভাবে কেন্দ্রীয় হাব/সুইচ নষ্ট হলে পুরো নেটওয়ার্কটিই অচল হয়ে পড়বে। স্টার টপোলজিতে কম্পিউটারগুলোকে স্টারের মতোই সাজাতে হবে তা কিন্তু সত্যি নয়!
ট্রি টপোলজি : ট্রি মানে হচ্ছে গাছ। কাজেই এই টপোলজিটাকে গাছের যতো দেখানোর কথা। ছবিটা একটু ভালো করে দেখলেই তুমি বুঝতে পারবে আসলে এটা গাছের মতো। গাছে যে রকম কাণ্ড থেকে ডাল, একটা ভাল থেকে অন্য ভাল এবং সেখান থেকে আরো ভাল বের হয়, এখানেও তাই হচ্ছে। এই টপোলজিতে একটি মজার বিষয় হলো এখানে অনেকগুলো স্টার টপোলজিকে একত্র করা!
মেশ টপোলজি : এই টপোলজি কম্পিউটারগুলো একটি আরেকটির সাথে যুক্ত থাকে এবং একাধিক পথে যুক্ত হতে পারে। এখানে কম্পিউটারগুলো শুধু যে অন্য কম্পিউটার থেকে তথ্য নেয় তা নয় বরং সেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারের মাঝে বিতরণও করতে পারে। যদি এমন হয় যে একটি নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটারই সরাসরি নেটওয়ার্কভুক্ত অন্য সবগুলো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটিকে বলে কমপ্লিট মেশ। ছবিতে ছয়টি কম্পিউটারের একটি কমপ্লিট মেশ দেখানো হলো।
দলগত কাজ : বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে টপোলজির উপর পোস্টার তৈরি কর।
নতুন শিখলাম : বাস টপোলজি, রিং টপোলজি, স্টার টপোলজি, ট্রি টপোলজি, মেশ টপোলজি, PAN, LAN, MAN, WAN।
নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তি-সঞ্চার সম্পদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগটি ধীরে ধীরে একটি নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। সাধারণভাবে এটিকে বলা হয় ক্লাউড কম্পিউটিং। তথ্যপ্রযুক্তির নানা ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে সব সময়ই নানা ধরনের যন্ত্রপাতি (Hardware), সার্ভার ইত্যাদি কিনতে হয়। সেগুলো ঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্যে দক্ষ মানুষ নিয়োগ দিতে হয়- সেই যন্ত্রপাতি বা সার্ভারে ব্যবহার করার জন্য মূল্যবান এবং ভাটিল সফটওয়্যার কিনতে হয়। তাহলেই প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি থেকে সঠিক সেবা পেতে পারে। অনেক সময়েই একটি সেবার প্রয়োজন হয় খুব সাময়িক এবং সেই সামরিক সেবার জন্যও প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক খরচ সাপেক্ষ একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি এত দ্রুত উন্নত হচ্ছে যে, অনেক অর্থ দিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার কয়েক বছরের মধ্যে দেখা যায় তার আর্থিক মূল্য কমে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতির skype | shahzadi.kim কারণে তথ্যপ্রযুক্তি জগতে কাউছ কম্পিউটিং নামে একটি নতুন ধরনের সেবা জন্ম নিয়েছে। এর পেছনের ধারণাটি খুবই সহজ। যেকোনো ব্যবহারকারী বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কম্পিউটারের সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারে । এক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তার জন্যে সবকিছু করে দেবে। ব্যবহারকারীর প্রয়োজনটি সামরিক হলে সে সাময়িকভাবে এটি ব্যবহার করবে এবং যতটুকু সেবা গ্রহণ করবে, ঠিক ততটুকু সেবার জন্য মূল্য দিবে।
এই ধারণাটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং পৃথিবীতে ক্লাউড কম্পিউটারের প্রচলন ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। তোষরা কিংবা তোমাদের পরিচিত কেউ যদি hotmail, yahoo বা gmail ব্যবহার করে কোনো ই-মেইল পাঠিয়ে থাকো তাহলে সেটি ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে করা হয়েছে। কিংবা তুমি যদি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকাতে কোনো বাংলা তথ্য খুঁজে দেখো, তাহলে সেটিও ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে করা হয়েছে। নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানুষের সাথে মানুষের এক ধরনের যোগাযোগ শুরু হয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কে একে অন্যের সাথে ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিনিময় করতে পারে, ইমেইল পাঠাতে বা গ্রহণ করতে পারে, মেসেজ দেওয়া নেওয়া করতে পারে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক ও টুইটার।
নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আজকাল টেলিফোন করা যায়। টেলিফোনে শুধু যে কণ্ঠস্বর শোনা যায় তা নয়, আমরা যার সাথে যোগাযোগ করছি তাকে দেখতেও পারি। অফিসের কাজে ফাইল দেওয়া নেওয়া করতে হয়, সেগুলোর প্রক্রিয়া করতে হয়। নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এখন এই ফাইল প্রক্রিয়া করার কাজগুলোও অনেক দক্ষতার সাথে করা হয়।
মানুষের বিনোদনের জন্য নেটওয়ার্কের ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একসময় একটি সিনেমা দেখার জন্য মানুষকে সিনেমা হলে যেতে হতো কিংবা সিডি কিনে দেখতে হতো। এখন সরাসরি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন দর্শক সিনেমাটি ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারে। নেটওয়ার্কের ব্যবহার বিনোদনের জগতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত করেছে।
রাষ্ট্রপরিচালনা, নিরাপত্তা এমনকি যুদ্ধবিগ্রহেও নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। নতুন পৃথিবীতে সম্পদ হচ্ছে তথ্য। যে যত দক্ষতার সাথে তথ্য ব্যবহার করতে পারবে, নতুন পৃথিবীতে সে-ই হবে তত শক্তিশালী। আর তথ্য ব্যবহার করার জন্য দরকার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তাই ভবিষ্যতে আমরা নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার দেখব সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
দলগত কাজ : কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারে কী কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর।
নতুন শিখলাম : ক্লাউড কম্পিউটিং, hotmail, yahoo, gmail, facebook, twitter
আমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত অনেক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জেনেছি। এবার আরও কিছু যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানব।
হাব (Hub)
সাধারণত তারযুক্ত নেটওয়ার্কে থাকা অনেকগুলো আইসিটি যন্ত্র তথা কম্পিউটার, প্রিন্টার ইত্যাদিকে একসাথে যুক্ত করতে হাব ব্যবহার করা হয়। হাৰ এক যন্ত্রকে অন্য যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয়। বলা যায়, একই নেটওয়ার্কে হাব দ্বারা সংযুক্ত সকল কম্পিউটার একটি আরেকটির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। হাব বললেই আমরা ইন্টারনেট হাব বা নেটওয়ার্ক হারকেই বুঝে থাকি। তবে ইদানীং আমরা অনেক USB হাবও দেখে থাকি।
হাবের মধ্য দিয়ে যখন তথ্য বা উপাত্ত এক যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে যায়, হাব তখন সেগুলো পড়তে পারে না। এক কম্পিউটার থেকে অন্য একটি কম্পিউটারে তথ্য বা উপাত্ত পাঠালে হাব তার সাথে সংযুক্ত সকল কম্পিউটারে ঐ তথ্য বা উপাত্ত পাঠিয়ে দেয়। এমনকি যে কম্পিউটার থেকে তথ্য পাঠানো হলো, তাকেও হাব আবার ঐ তথ্য পাঠিয়ে দেয়। অর্থাৎ হাব নির্দিষ্ট ঠিকানা অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে পারে না। বর্তমানে কম গতি ও বেশি সুবিধা পাওয়া যায় না বলে হাবের ব্যবহার অনেক কমে গেছে।
হাবতো বোঝা গেল। ছবিও দেখা গেল। এখন আমরা সুইচ (Switch) সম্পর্কে জানব।
সুইচ তার সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি আইসিটি যন্ত্রের একটি করে ঠিকানা বরাদ্দ করে এবং ঐ ঠিকানা অনুযায়ী তথ্যের আদান-প্রদান করে। অর্থাৎ কোনো একটি ঠিকানা থেকে অন্য কোনো ঠিকানার উপাত্ত বা ডেটা পাঠাতে চাইলে সুইচ এক ঠিকানার জন্য অন্য ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এ বরাদ্দকৃত ঠিকানাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভাষায় MAC Media Access Control address নামে ডাকা হয়। উপরের শ্রেণিতে এ বিষয়ে আমরা আরো ব্যাপকভাবে জানব। আলাদা আলাদা ঠিকানা ব্যবহারের কারণে সুইচ হারে চেরে অনেক দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে। এজন্য নেটওয়ার্ক তৈরিতে সুইচই এখন সবার পছন্দ।
রাউটার (Router)
Router শব্দটি এসেছে Route শব্দ থেকে। রাউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যা হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের সমন্বরে তৈরি। এটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে তৈরি। একই প্রোটোকলের (উপরের শ্রেণিতে আলোচনা করা হবে) অধীনে কার্যরত দুটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার জন্য রাউটার ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ইন্টারনেটে অসংখ্য রাউটার রয়েছে।
রাউটার এর প্রধান কাজ ডেটা বা উপাত্তকে পথ নির্দেশনা দেওয়া। ধরো অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত কোনো বন্ধুকে ই-মেইলের মাধ্যমে কেউ একটি ছবি পাঠাতে চায়। ছবিটি কয়েকটি ডেটা প্যাকেটে বিভক্ত হয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফর কম্পিউটারে পৌঁছাবে। প্রতিটি ডেটা প্যাকেটে গন্তব্যস্থলের ঠিকানা সংযুক্ত থাকে। ইন্টারনেট যেহেতু জালের মতো গোটা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, তাই বিভিন্ন ডেটা প্যাকেট বিভিন্ন পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। একটি ডেটা প্যাকেট কোনো একটি রাউটার-এ পৌছালে পরবর্তী কোন পথে অগ্রসর হলে ডেটা সহজে এবং দ্রুত পত্তব্যে পৌছাবে তার পথনির্দেশ দেয় ঐ রাউটার।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি তোমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হবে। মনে কর তুমি বাংলাদেশ থেকে বিমানে করে এমন একটি দেশে যেতে চাও, যেখানে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমানে যাওয়া যায় না। খन কी হবে? বিমান কোম্পানি প্রথমে তোমাকে সুবিধাজনক একটি গন্তব্যে নিয়ে যাবে, যেখান থেকে অন্য আরেকটি বিমান তোমার কাঙ্ক্ষিত দেশটিতে তোমাকে পৌঁছে দেবে। কি! বোঝা গেল রাউটারের কাজের ধরন?
দলগত কাজ : হাব, সুইচ ও রাউটারের পার্থক্য নির্ধারণ করে উপস্থাপন কর।
নতুন শিখলাম হাব, USB হাব, Node, সুইচ, MAC address, Router, প্রোটোকল, ডাটা প্যাকেট।
মডেম (Modem)
ইন্টারনেটের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলো মডেম। Modulator এর Mo এবং Demodulator হতে Dem এই অংশ দুটির সমন্বয়ে Modem শব্দটি তৈরি হয়েছে। মডেম তার দ্বারা সংযুক্ত বা তারবিহীন (wireless) প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা বা উপাত্ত পাঠানোর জন্য এক ধরনের সিগনাল দরকার হয়। মডেম এমন একটি নেটওয়ার্ক (Network device), যা কম্পিউটার হতে প্রাপ্ত ডিজিটাল সিগনালকে রূপান্তর করে Network কে প্রেরণ করে। আবার নেটওয়ার্ক হতে প্রাপ্ত সিগনালকে রূপান্তর করে কম্পিউটারে প্রেরণ করে।
পূর্বে ষন্ন গতির ডায়াল-আপ মডেম ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এর পরিবর্তে দ্রুতগতির কেবল বা DSL (Digital Subscribers Line ) মডেম ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে Wi-Fi (Wireless Fidelity) মডেম ব্যবহৃত হচ্ছে।
UFT (LAN Card)
দুটো বা অধিকসংখ্যক কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে যে বস্তুটি অবশ্যই প্রয়োজন হয়, তা হলো ল্যান কার্ড। অর্থাৎ আমরা যদি কোনো নেটওয়ার্ক পড়ে ভুলতে চাই, তবে অবশ্যই ল্যান কার্ডের প্রয়োজন হবে। নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত এক আইসিটি যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে কোনো তথ্য বা উপাত্ত পাঠাতে কিংবা গ্রহণ করতে ল্যান কার্ডের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ল্যান কার্ডের ভূমিকা ইন্টারপ্রেটারের মতো।
বর্তমানে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বা আইসিটি যন্ত্রের মাদারবোর্ডের সাথেই ল্যান কার্ড সংযুক্ত (Bullt-in) থাকে। তারপরও কিছু আইসিটি যন্ত্রে আলাদা করে ল্যান কার্ড সংযুক্ত করতে হয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন তারবিহীন ল্যান কার্ড খুবই জনপ্রিয়।
দলগত কাজ : তারযুক্ত ল্যান কার্ড ব্যবহারের সমস্যা ও তারবিহীন ল্যান কার্ড ব্যবহারের সুবিধাগুলো দলে আলোচনা করে নির্ধারণ কর এবং উপস্থাপন কর।
নতুন শিখলাম : মডেম, Modulator, Demodulator, DSL মডেম, Wi-Fi মডেম, ল্যান কার্ড, ইন্টারপ্রেটার।
তোমরা সবাই জান, নেটওয়ার্ক শুধু একটি প্রতিষ্ঠান বা একটি শহরের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, এমনকি একটি দেশের মাঝেও সীমাবদ্ধ নয়, নেটওয়ার্ক এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। যার অর্থ পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে সিগন্যাল পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় পৌঁছে দিতে হয়। কাছাকাছি জায়গা হলে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পাঠানো যেতে পারে কিন্তু পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠাতে হলে স্যাটেলাইট বা অপটিক্যাল ফাইবার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
স্যাটেলাইট : স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ মহাকাশে থেকে পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে এটি ঘুরে, তাই এটিকে মহাকাশে রাখার জন্য কোনো জ্বালানি বা শক্তি খরচ করতে হয় না। পৃথিবী তার অক্ষে চব্বিশ ঘণ্টার ঘুরে আসে, স্যাটেলাইটকেও যদি ঠিক চব্বিশ ঘণ্টার একবার পৃথিবীকে ঘুরিয়ে আনা যায় তাহলে পৃথিবী থেকে মনে হবে সেটি বুঝি আকাশের কোনো এক জারগার স্থির হয়ে আছে। এ ধরনের স্যাটেলাইটকে বলে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট। যেকোনো উচ্চতার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট রাখা যায় না । এটি প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে একটি নির্দিষ্ট কক্ষ পথে রাখতে হয়। আকাশে একবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বসানো হলে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে সেখানে সিগন্যাল পাঠানো যায় এবং স্যাটেলাইট সেই সিগন্যালটিকে নতুন করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দিতে পারে।
এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে রেডিও, টেলিফোন, মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে সিগন্যাল পাঠানো যায়। ১৯৬৪ সালে প্রথম যখন এভাবে মহাকাশে প্রথমবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়, তখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল।
বাংলাদেশও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নামে একটি স্যাটেলাইট ২০১৮ সালের ১২ মে তারিখে মহাকাশে প্রেরণ করে । স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭তম। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা হলো। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এ স্যাটেলাইট নিঃসন্দেহে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
স্যাটেলাইট দিয়ে যোগাযোগ করার দুটি সমস্যা রয়েছে। যেহেতু স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে থাকে তাই সেখানে সিগন্যাল পাঠানোর জন্য অনেক বড় এন্টেনার দরকার হয়। দ্বিতীয় সমস্যাটি একটু বিচিত্র। পৃথিবী থেকে যে সিগন্যাল পাঠানো হয় সেটি ওয়্যারলেস সিগন্যাল। ওয়্যারলেস সিগনাল দ্রুত বেগে গেলেও এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে একটু সময় নেয়। তাই টেলিফোনে কথা বললে অন্য পাশ থেকে কথাটি সাথে সাথে না শুনে একটু পরে শোনা যায়।
অপটিক্যাল ফাইবার : অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত সরু এক ধরনের প্লাস্টিক কাঁচের তন্তু। অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে আলোক সিগন্যাল পাঠানো হয়। ঠিক যেমনি বৈদ্যুতিক তার দিয়ে বৈদ্যুতিক সিশন্যাল পাঠানো হয়। তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগতে পারে, অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে কিভাবে আলোক সিগন্যাল পাঠানো হয়। তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন সম্পর্কে জেনেছ। এই পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে আলোক সিগন্যাল অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়।
বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে প্রথমে আলোক সিগন্যালে পরিণত করা হয়। এরপর আলোক সিগন্যালকে অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিরে পাঠানো হয়। অপরপ্রান্তে আলোক সিগন্যালকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিণত করা হয়। এভাবেই আপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে সিগন্যাল পাঠানো সম্প হয়।
অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে অনেক বেশি সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব। শুনে অবাক হবে যে একটি অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে একসাথে কয়েক লক্ষ টেলিফোন কল পাঠানো সম্বব।
ইদানীং অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ এত উন্নত হয়েছে যে পৃথিবীর সব দেশেই অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক দিয়ে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত। অনেক সময়েই এই অপটিক্যাল ফাইবার পৃথিবীর এক মহাদেশ থেকে অন্যদেশে নেবার সময় সেটিকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে নেওয়া হয়। এই ধরনের ফাইবারকে বলে সাবমেরিন ক্যাবল।
স্যাটেলাইট সিগনাল আলোর বেগে যেতে পারে কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার কাঁচ/ প্লাস্টিক তন্তুর (Fiber) ভেতর দিয়ে যেতে হয় বলে সেখানে আলোর বেগ এক-তৃতীয়াংশ কম। তারপরেও পৃথিবীর এক পৃষ্ঠ থেকে অন্য পৃষ্ঠে অপটিক্যাল ফাইবারে সিগন্যাল পাঠাতে হলে সেটি অনেক তাড়াতাড়ি পাঠানো যায়। কারণ তখন প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের স্যাটেলাইটে সিগন্যালটি গিয়ে আবার ফিরে আসতে হয় না।
দলগত : স্যাটেলাইট আর অপটিক্যাল ফাইবারের মাঝে কোনটা বেশি কার্যকর সেটি নিয়ে একটি বিতর্ক আয়োজন কর।
নভূম শিখলাম : জিও স্টেশনারি, ইনফ্রারেড।
Read more